ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫ , ১১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় অদৃশ্য বিপদ ‘অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স’

আপলোড সময় : ১২-০৩-২০২৫ ০৭:২৫:৩৭ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ১২-০৩-২০২৫ ০৭:২৫:৩৭ অপরাহ্ন
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় অদৃশ্য বিপদ ‘অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স’
বাংলাদেশে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বর্তমানে স্বাস্থ্য খাতে এক মারাত্মক সমস্যা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। একসময় সংক্রমণের বিরুদ্ধে কার্যকর যেসব অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহৃত হতো, আজ সেগুলোর বিরুদ্ধে জীবাণুগুলো দ্রুত প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। এর ফলে এমন রোগের চিকিৎসা কঠিন হয়ে উঠছে, যা একসময় সহজেই নিরাময় করা সম্ভব ছিল। অপ্রয়োজনীয় ও অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের ফলে জীবাণুগুলোতে এই প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করতে পারে।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে এ বিষয়ে উদ্বেগজনক পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) এক গবেষণায় দেখা গেছে, বর্তমানে ৩৬ ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক মানুষের দেহে কার্যকারিতা হারিয়েছে। আরও তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে ২৬,০০০ মানুষের মৃত্যু শুধুমাত্র অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের কারণে হয়েছে। বিভিন্ন জীবাণু বর্তমানে ৭৫%-৯০% পর্যন্ত অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে, যা চিকিৎসকদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রধান চারটি জীবাণুর ক্ষেত্রে মাল্টি-ড্রাগ রেজিস্ট্যান্সের হার ৯১%-৯৮% পর্যন্ত পৌঁছেছে; যার অর্থ, এই জীবাণুগুলোর বিরুদ্ধে অধিকাংশ অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকর নয়।

অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স বৃদ্ধির পেছনে একাধিক কারণ কাজ করছে। অনেক চিকিৎসক সাধারণ রোগের ক্ষেত্রেও অপ্রয়োজনীয়ভাবে অ্যান্টিবায়োটিক প্রেসক্রাইব করেন, যা রেজিস্ট্যান্স বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিছু ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থে চিকিৎসকদের অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে উৎসাহিত করে। তদুপরি, ফার্মেসিতে প্রেসক্রিপশন ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করা এবং রোগীদের ওষুধের কোর্স সম্পূর্ণ না করার প্রবণতাও এই সমস্যাকে তীব্রতর করে তুলছে।

Clear Concept এবং Chinta Research Bangladesh-এর সহযোগিতায় পরিচালিত এক জরিপের তথ্য সংগ্রাহক হিসেবে কাজ করি। আমার সংগৃহীত শ’খানেক তথ্য বিশ্লেষণে লক্ষ্য করি, শিক্ষিত জনগণের মধ্যে ৯০% এরও বেশি অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের বিষয়ে সঠিক ধারণা রাখেন না এবং অশিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে এই বিষয়ে সম্পূর্ণ অজ্ঞতা বিরাজ করে। আমার এই স্বল্প সংখ্যক বাস্তব তথ্য ও বিভিন্ন গবেষণা স্পষ্টতই নির্দেশ করে যে, জনগণের মধ্যে যথাযথ সচেতনতার অভাবই সমস্যাটিকে আরও গভীর করে তুলছে।

অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স মোকাবিলায় কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ এখন অত্যন্ত জরুরি। গণমাধ্যম ও স্বাস্থ্য সংস্থার মাধ্যমে সঠিক অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের সচেতনতা বৃদ্ধি, প্রেসক্রিপশনভিত্তিক ফার্মেসি নিয়ন্ত্রণ, চিকিৎসকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ, ওষুধ প্রস্তুতকারীদের সামাজিক দায়বদ্ধতা নিশ্চিতকরণ এবং উন্নত ল্যাবরেটরি সুবিধার ব্যবস্থা—এসব উদ্যোগ গ্রহণ করলে আমরা এই মারাত্মক সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারব।

মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম বসুনিয়া,
ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

নিউজটি আপডেট করেছেন : BanglaNewsLive24

কমেন্ট বক্স

প্রতিবেদকের তথ্য

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ